মোঃ সায়েদুর রহমান, স্টাফ রিপোর্টার ঃ- মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার ছনকা উচ্চ বিদ্যালয় আদালতের আদেশ অমান্য করে অন্যত্রে সরিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে ভারপ্রাপ্ত প্রাধন শিক্ষক ও বর্তমান বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির বিরুদ্ধে।
সড়জমিনে দেখা যায়, উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের ছনকা উচ্চ বিদ্যালয় ধলেশ্বরী নদীর ৮০ ফুট দূরত্বে অবস্থিত হওয়ায় ঝুঁকির মুখে পড়ে এই বিদ্যালয়টি। প্রধান শিক্ষকের আবেদন ও স্থানীয়দের মতামতের ভিত্তিতে বিদ্যালয়টি নদীর পশ্চিম তীরে, প্রায় ৪০০ মিটার দূরে স্থানান্তর করা হয় এবং সেখানে পাঠদান শুরু করে। কিন্তু গত ২০ মে ২০২৫ তারিখে আদালতের পূর্বের আদেশ স্থগিত করা হলে বিদ্যালয়টি পূর্বের নদীপাড়ে ফেরত যাওয়া শুরু হয়। এতে করে পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ের শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসীর মধ্যে দ্বিধা ও বিভাজন সৃষ্টি হয়। দুই স্থানে আলাদা পাঠদান করায় শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থা ও পড়াশোনা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
এ অবস্থায় বরাইদ ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল মজিদ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে আদালতে মামলা করেন। এরপর প্রধান শিক্ষককে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাটুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উভয় পক্ষের দন্দ নিরসনে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হলে প্রধান শিক্ষক ও পশ্চিম পাড়ের পক্ষ থেকে মহামান্য হাইকোর্টে আপিল করেন।
গত ৬ জুন ২০২৫ তারিখে মহামান্য হাইকোর্ট পূর্বের বিদ্যালয়কে অবৈধ ঘোষণা করে এবং স্থানান্তরিত পশ্চিম পাড়ে অর্থাৎ ছনকা উচ্চ বিদ্যালয়ের বৈধ জায়গায় শ্রেনি কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার আদেশ প্রদান করেন।
অধিকাংশ শিক্ষক এই আদেশ মান্য করে সেখানে পাঠ পরিচালনা করছেন। কিন্তু এসএম শফিকুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও অফিস সহকারি আব্দুল গফুর আদালতের আদেশ অমান্য করে পূর্বের স্থানে কিছু শিক্ষার্থীদের পাঠদান অব্যাহত রেখেছেন, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
সম্প্রতি ২৪ জুন তারিখে আদালতের নির্দেশ পালনকারী শিক্ষকদের কাছে নিয়ম বহির্ভূত একটি ‘কারণ দর্শানো নোটিশ’ পাঠানো হয়, যা কোনো স্কুল স্টাফ নয় বরং বরাইদ ইউনিয়নের দুই গ্রাম পুলিশ বহন করে আনেন। নোটিশে স্থানীয় চেয়ারম্যান কিংবা সভাপতির স্বাক্ষর না থাকায় শিক্ষকরা তা প্রত্যাখ্যান করেন।
এই সংকট নিরসনে প্রশাসনের ভূমিকা একেবারেই রহস্যজনক। বরাইদ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান গাজী আব্দুল হাই এ বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এবিষয়টিক কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়তে পারে দু গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ। ছনকা গ্রামের সুশীল সমাজ ও অভিভাবকমণ্ডলী চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন এবং দ্রুত প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সরকারি বেতনভুক্ত শিক্ষকরা দ্বন্দ্বপূর্ণ পরিবেশে পড়াশোনা করাতে গিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নিজেদের চাকরি ও শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। ছাত্র-ছাত্রীরা বন্ধু-বান্ধব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
স্থানীয়দের দাবি: “ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে আমরা ভীষণ চিন্তিত। এত দ্বন্দ্বে তাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। প্রশাসনের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।”