নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ- আত্মত্যাগের অনলবর্ষিত প্রহর আর দেশপ্রেমের দীপ্ত অনুপ্রেরণায় পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণে গভীর শ্রদ্ধায় পালিত হলো শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম-এর ৪৪তম শাহাদাৎ বার্ষিকী।
একটি নাম—যা কেবল ইতিহাসের পৃষ্ঠা নয়, বরং জাতির হৃদয়ে খচিত এক অনন্ত প্রেরণার প্রতীক। স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে যার কণ্ঠস্বর, শাসনপটের পুনর্গঠনে যার সাহসিকতা, আর আত্মদানের মাধ্যমে যিনি পরিণত হয়েছেন জাতির চেতনাগত স্তম্ভে—তাঁর স্মরণে আয়োজিত হয় এ দিনটির আলোচনা ও দোয়ার মাহফিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি কনফারেন্স রুমে বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠানের আয়োজক ছিল ইউনিভার্সিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইউট্যাব), পবিপ্রবি ইউনিট। অনুষ্ঠানটি পরিণত হয় এক অনন্য অনুভবের মঞ্চে, যেখানে শোক, শ্রদ্ধা ও অনুরাগ মিলেমিশে এক গভীর মানবিক উপলব্ধির জন্ম দেয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. কাজী রফিকুল ইসলাম। তিনি তাঁর বক্তব্যে শহীদ জিয়াউর রহমানের আত্মত্যাগ, রাজনৈতিক দূরদর্শিতা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার চেষ্টাকে স্মরণ করে বলেন—“এই শহীদ রাষ্ট্রনায়ক শুধু ইতিহাসের চরিত্র নন, তিনি আমাদের নৈতিকতার এক আলোকবর্তিকা।” তিনি আরও বলেন, তার মৃত্যুতে আমরা হারিয়েছি একজন সাহসী দেশপ্রেমিক, রাষ্ট্রনায়ককে। তার রাজনৈতিক দুরদর্শিতা, আত্মত্যাগ, নতুন বাংলাদেশ বিনির্মানে এবং তার আদর্শ আমাদের পথ প্রদর্শক ও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ও ইউট্যাব-এর সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ড. এস. এম. হেমায়েত জাহান বলেন শহীদ রাস্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের এক ঝলক ব্যতিক্রমী রাষ্ট্রনায়কত্বর প্রতিচ্ছবি—“একজন যোদ্ধা যখন রাষ্ট্রনায়ক হয়ে ওঠেন, তখন তাঁর ভেতরের দেশপ্রেমই জাতির পুনর্গঠনের প্রধান ভিত্তি হয়।”
শহীদ জিয়াউর রহমানকে যদি আপনারা ভালোবাসেন তাহলে তার আদর্শ ধারণ করতে হবে।
সভাপতিত্ব করেন ইউট্যাব, পবিপ্রবি ইউনিটের সভাপতি প্রফেসর ড. মো: মামুন অর রশিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন শহীদ বার্ষিকী উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর মোহাম্মদ জামাল হোসেন। সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন কমিটির সদস্য-সচিব প্রফেসর ড. মো: মাসুদুর রহমান।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বিবিএ অনুষদের সাবেক ডিন প্রফেসর বদিউজ্জামাল, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ মহসিন হোসেন খান, কৃষি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ দেলোয়ার হোসেন, পোস্ট গ্রাজুয়েট স্ট্যাডিজ এর ডিন প্রফেসর ড. মোঃ আতিকুর রহমান, সিএসই অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ খোকন হোসেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মোঃ ইকতিয়ার উদ্দিন, জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগের সিনিয়র ডেপুটি ডিরেক্টর মোঃ মাহফুজুর রহমান সবুজ, সয়েল সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. এবিএম সাইফুল ইসলাম, তরুণ কৃষি বিজ্ঞানী ও কৃষি অনুষদের এ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ড. মোঃ সগিরুল ইসলাম মজুমদার, কৃষি অনুষদের এ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন, ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোঃ আবুবকর সিদ্দিক, উপ -খামার তত্বাবধায়ক মোঃ আবুল হোসেন, সিএসই অনুষদের প্রভাসক আব্দুল্লাহ আল জাহিদ, প্রভাষক রাফিয়াতুল জান্নাতুল রিপা, কর্মচারী মোঃ মাহবুবুর রহমান, পবিপ্রবি ছাত্র দলের সভাপতি মোঃ জাহিদুল ইসলাম রাতুল এবং পবিপ্রবি ছাত্র দলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ সোহেল রানা জনি।
বক্তারা তাঁদের আলোচনায় শহীদ জিয়ার সামরিক জীবন, রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা, বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তন, কৃষি ও শিল্পোন্নয়নসহ আর্থ-সামাজিক খাতে তাঁর যুগান্তকারী অবদান তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, “শহীদ জিয়াউর রহমান ছিলেন ইতিহাসের সেই বলিষ্ঠ অধ্যায়, যার সাহসিকতা জাতিকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস দিয়েছে, দিয়েছে আত্মবিশ্বাস ও আত্মমর্যাদার চেতনা।”
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি ছিল লক্ষ্যণীয়। পুরো অনুষ্ঠান জুড়েই ছিল এক অনাবিল ভাবগম্ভীর পরিবেশ, যেখানে অতীতের শ্রদ্ধাভাজন এক রাষ্ট্রনায়কের আত্মার জন্য চলছিল অশ্রুসজল প্রার্থনা।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র আল কোরআন থেকে তেলাওয়াত করা হয় এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়ার রুহের মাগফিরাত কামনায় অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত। দেশ ও জাতির মঙ্গল, স্থিতিশীলতা এবং শান্তি কামনায় উত্থিত হয় অসংখ্য হৃদয়ের নিঃশব্দ আকুতি। এই স্মরণসভা কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়—বরং এটি একটি চেতনার জাগরণ। একজন শহীদ রাষ্ট্রনায়কের জীবনী থেকে আলোকিত হয়ে নতুন প্রজন্ম যদি নিজেকে খুঁজে পায় দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিবেদিত করার প্রত্যয়ে, তবে এই আয়োজনই হয়ে উঠবে সফল।