কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ঃ-ঐতিহ্য ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে দেশের সর্ববৃহৎ ঈদুল আজহার জামাত। শনিবার (৭ জুন) সকাল ৯টায় শুরু হওয়া এ জামাতে অংশ নেন হাজারো মুসল্লি।
ঈদের জামাত পরিচালনা করেন শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের গ্র্যান্ড ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ। ১৮২৮ সালে শুরু হওয়া শোলাকিয়ার ঈদ জামাতের ধারাবাহিকতায় এটি ছিল ঈদুল আজহার ১৯৮তম জামাত।
ঐতিহ্য অনুসারে, জামাত শুরুর আগে মুসুল্লিদের সতর্ক করতে ফাঁকা গুলির মাধ্যমে সংকেত দেওয়া হয়। জামাত শুরুর ১০ মিনিট আগে ৩টি, ৫ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি গুলি ছোড়া হয়।
জামাত ও খুতবার পর অনুষ্ঠিত হয় দেশ, জাতি ও মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও কল্যাণ কামনায় বিশেষ মোনাজাত।
দূর-দূরান্ত থেকে আগত মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেন চালু করে। একটি ময়মনসিংহ এবং অপরটি ভৈরব থেকে শোলাকিয়ায় পৌঁছায় এবং নামাজ শেষে দুপুর ১২টায় আবার ফিরে যায়।
শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এরশাদ মিয়া জানান, কোরবানির প্রস্তুতি ও পশু জবাইয়ের ব্যস্ততার কারণে ঈদুল ফিতরের তুলনায় ঈদুল আজহার জামাতে মুসল্লির সংখ্যা কিছুটা কম হয়।
নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেয়া হয় সর্বোচ্চ ব্যবস্থা। ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার কাজেম উদ্দীন জানান, মাঠজুড়ে ওয়াচ টাওয়ার, সিসি ক্যামেরা এবং ড্রোন ব্যবহার করে কঠোর নজরদারি চালানো হয়। পোশাকধারী ও সাদা পোশাকের পুলিশ ছাড়াও মাঠে দায়িত্ব পালন করে র্যাব, বিজিবি এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, মসনদ-ই-আলা ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান বাহাদুর ১৮২৮ সালে কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্বপ্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে প্রায় সাত একর জায়গাজুড়ে এই ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রথম জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করায় এর নাম হয় ‘সোয়া লাখি মাঠ’, যা পরে ‘শোলাকিয়া’ নামে পরিচিতি পায়।
বর্তমানে এই মাঠে একসঙ্গে দুই লাখেরও বেশি মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। প্রায় সাত একর আয়তনের ঈদগাহে রয়েছে ২৬৫টি কাতার।