নিজস্ব প্রতিবেদক ঃ- ৩রা জুন বিশ্ব বাইসাইকেল দিবসও। ২০১৮ সাল থেকে জাতিসংঘ এই দিবসটি পালন করে আসছে। এবারের বিশ্ব বাইসাইকেল দিবসের প্রতিপাদ্য: “কম জায়গা, শূন্য দূষণ – বাইসাইকেল আধুনিক বাহন”।
দিবসটির অংশ হিসেবে আজ ০১ জুন ২০২৫ ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীইং বাংলাদেশ ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর যৌথ উদ্যোগে এবং সহ-আয়োজক উত্তরা সাইকেল কমিউনিটি, ফিমেইল সাইকেলার্স অফ বাংলাদেশ, সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদ সম্মিলিতভাবে একটি বাইসাইকেল র্যালি আয়োজন করে। শতাধিক সাইক্লিস্ট নিয়ে র্যালিটি আবাহনী খেলার মাঠ, মানিক মিয়া এভিনিউ ও খামারবাড়ি হয়ে পুনরায় আবাহনী মাঠে এসে শেষ হয়। র্যালি পরবর্তী একটি অবস্থান কর্মসূচি ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর সহকারী প্রকল্প কর্মকর্তা, মোঃ মিঠুনের সঞ্চলনায় সারা দেশে সাইকেল বিস্তারের দাবি জানান বক্তারা।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক জনাব গাউস পিয়ারী বলেন, জাতিসংঘ ২০২৬ থেকে ২০৩৫ সালকে টেকসই যাতায়াত দশক হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে মানুষের জন্য একটি যানজটমুক্ত নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিত করা, জলবায়ু বিপর্যয় হ্রাস করা এবং একটি সাশ্রয়ী পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উপর জোর দেয়া হয়েছে। আর এক্ষেত্রে সাইকেল হতে পারে সর্ব প্রথম এবং সর্ব উৎকৃষ্ট যাতায়াত মাধ্যম। তাই সরকারসহ সকলের কাছে আমার আহ্বান সাইকেলের প্রসারে এগিয়ে আসুন। ঢাকা শহরে সাইকেল লেন থাকলেও এর কোন সংযোগ নেটওয়ার্ক লেন নেই। উপরন্ত সাইকেলের খুচরা যন্ত্রাংশের উপর অনেক কর আরোপিত আছে যা এই বাহনটিকে সাধারণ মানুষের কাছে সহজ লভ্য ও নিরাপদ করতে পারছে না। সরকারের কাছে আহ্বান এসকল বাধা দূর করে এই বাহনটিকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিন।
ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা জনাব এম.এ. মান্নান মনির ঢাকার যানজট প্রসঙ্গ টেনে বলেন, আমাদের যানজটের কারণে ঢাকা শহর এখন একটি স্থবির শহরে পরিণত হয়েছে। এক পরিসংখ্যান বলছে যে, ঢাকাবাসীর প্রতিদিন ৮২ লক্ষ ঘন্টা নষ্ট হচ্ছে শুধুমাত্র যানজটের কারণে, যা ব্যক্তিগত গাড়ি অতিরিক্ত বৃদ্ধি এর জন্য দায়ী। ব্যক্তিগত গাড়ি বেশি জায়গা দখল করার ফলে রাস্তা সংকুচিত হয়ে পড়ছে। আমাদের এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য নীতিনির্ধারকদের বাইসাইকেল প্রসারে দৃষ্টি দিতে হবে।
বাংলাদেশ সাইকেল লেন বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি, আমিনুল ইসলাম টুববুস বলেন, দেশে সাইক্লিস্টরা সবচাইতে অবহেলিত। সাইক্লিংএ যাতায়াত মাধ্যমে ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের শক্তিশালী উন্নয়ন আনা সম্ভব। বাইসাইকেল এমন একটি বাহন, যা আমাদের দৈনন্দিন যাতায়াত মাধ্যমকে সহজ ও সাবলীল করে তুলে। যে কোন বয়সের মানুষের শারীরিক ও মানসিক, সুস্বাস্থ্য এবং সৃজনশীল সুস্থ ধারা কাজে মনোযোগী যেমনটি করে, তেমনি- জ্বালানি সাশ্রয়, যানজট, শব্দ দূষণসহ দেশের পরিবেশ উন্নয়নে সকল নাগরিকদের সাইক্লিংএর উৎসাহিতকরণে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা তৈরি করা রাষ্ট্রের নিকট আহ্বান জানান।
উত্তরা সাইকেল কমিউনিটির এডমিন ওমর ফারুক বলেন, ঢাকা মহানগরী শব্দ ও বায়ু দূষণে শীর্ষে অবস্থান করছে। দূষণ রোধে বাইসাইকেলকে প্রাধান্য দেওয়া দরকার। সাধারণ জনগণকে প্রতিদিন অনেক টাকা ব্যয় করতে হয় যাতায়াতে। এজন্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকতে হবে সাইকেলের দাম, সাইকেল চালানোর পরিবেশ, লেন ও এর জন্য পার্কিং থাকতে হবে।
রায়ের বাজার হাই স্কুল সহকারী প্রধান শিক্ষক তাহাজ্জত হোসেন বলেন, ঢাকা শহরে সকল রাস্তায় সাইকেল লেন দেবার ব্যাপারে জোর দেন। তিনি বলেন, বিগত সরকার একটি লেন করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা না থাকায় সেটি ব্যর্থ হয়। আমরা এই সভা থেকে অনুরোধ জানাই ঢাকায় যেন সাইকেল নেটওয়ার্ক ও সাইকেল লেন বাস্তবায়ন করা হয়,
বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ সাইক্লিং ক্লাবের মডারেটর,মোঃ আব্দুল আলীম বলেন,
স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা বেশিরভাগ সাইক্লিং করে থাকে, তাদের নিরাপত্তার জন্য পৃথক সাইকেল লেন ও পার্কিং সময়ের দাবি।
বিশ্ব বাইসাইকেল দিবস উপলক্ষে ইনস্টিটিউট অব ওয়েলবীওইং বাংলাদেশ ও ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট কর্তৃক আয়োজিত সাইকেল র্যালি ও অবস্থান কর্মসূমচচিতে আরো অংশ নেন কনফিডেন্স মেমোরিয়াজল হাই স্কুল, টিম, লাইফবাংলাদেশ, ট্রান্সফর্ম ইকো কেয়ার, বিডি সাইক্লিস্ট, ঢাকা ইউনিভার্সিটি সাইক্লিস্ট, জনকল্যাণ ফাউন্ডেশন, পুলারটিন রাইডার্স, হেমন্ত সংগঠনের প্রতিনিধিসহ আরও অনেকে।